ঐতিহাসিক ৫ মে। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া অবিস্মরণীয় একটি দিন।

লিখেছেন লিখেছেন মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। ০৫ মে, ২০১৪, ০৫:৪২:০৮ বিকাল





৫ মে ২০১৩।তখন ভোর ৪ টা।ঘুম থেকে উঠে অযু এস্তেঞ্জা সেড়ে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর নামায পড়ে নিয়ে রওয়ানা হলাম আমাদের নির্ধারিত অবরোধ পয়েন্ট গাবতলীর দিকে।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিয়া মসজিদের সামনে দিয়ে শ্যামলী হয়ে গাবতলীর দিকে এগিয়ে চলছে আমাদের কাফেলা।গাবতলী পৌছঁতে পৌছঁতে ফর্সা হয়ে গেছে আকাশ।আকাশের মনটাও যেন খারাপ।সেও যেন ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে, রাসুলের দুশমনদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্ত হবোনা।সকাল ৮ টা নাগাদ টেকনিক্যাল থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত পুরো গাবতলী পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে।গাবতলী পয়েন্টের জিম্মাদারী ছিল মিরপুর ও মোহাম্মাদপুর জোনের নেতৃবৃন্দের হাতে।দুপুর নাগাদ গাবতলী পয়েন্টে চলছিল নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে জ্বালাময়ী বক্তৃতা।ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এসে ঘোষনা করলেন,আমরা জোহর নামায আদায় করে শাপলা চত্বর অভিমূখে রওয়ানা হবো।বিকাল ৩ টায় সেখানে সমাবেশ হবে।সমাবেশ থেকে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।এ ঘোষনা দেয়া মাত্র সকলের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হলো।



তখন দুপুর ১লা। ময়দানে জোহর নামায আদায় করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের গাবতলী পয়েন্টের বিশাল কাফেলার সাথে শাপলা অভিমুখে চললাম। শ্যামলী শিশুমেলা দিয়ে আগারগাঁও, কাকরাইল, নয়াপল্টন হয়ে যখন আমরা শাপলার খুব কাছাকাছি তখন শুনতে পেলাম গোলাগুলির শব্দ। বায়তুল মোকাররম থেকে দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকা তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। একদিকে এখানে পুলিশের সাথে নিরস্ত্র তাওহীদি জনতার সংঘর্ষ চলছিল। অন্যদিকে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ শুরু হলো। সন্ধ্যা নাগাদ মঞ্চ থেকে অবস্থান করার ঘোষনা করা হলো। ওদিকে বায়তুল মুকাররামের জুয়েলারী মার্কেট ও কিতাবের মার্কেটে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে হেফাজতের উপর কুরআন পুড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। অপরদিকে শাপলা চত্বরের সমস্ত বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি করে, সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে এক নৃশংস্র ও কাপুরুষোচিত হামলার পরিকল্পনা করা হয়। রাত যত গভীর হতে থাকে বিপদের ঘনঘটা ততই বাড়তে থাকে।



দিবাগত রাত।বিদঘুটে অন্ধকার চারোদিকে।বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সন্ধ্যারাতেই।রাস্তার বিলবোর্ডের বাতিগুলোও নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। মোবাইলের টর্চলাইটের আলো ছাড়া কিছুই আর দেখা যাচ্ছে না।ক্লান্ত শ্রান্ত ক্ষুধিত তাওহীদি জনতা পিচঢালা রাজপথে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ততক্ষনে।ওদিকে প্রসাশন রাতের আধাঁরে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য নতুন দশহাজার ফোর্স ও গোলা-বারুদ তলব করে আনলো।রাত তখন আড়াইটা।আমাদের অধিকাংশই তখন ঘুমন্ত।কেউ কেউ তাহাজ্জুদ পড়ছেন।কেউবা আবার জিকিরে মশগুল। অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করছিল সর্বত্র।আচানক কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই শুরু হলো চারিদিক থেকে কাপুরুষোচিত ও নৃশংস হামলা।মূহুর্মুহু গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ।ঘুমন্ত ও আতঙ্কিত জনতা দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো।পথ না পেয়ে অনেকেই তাদের বন্দুকের নাগালে এসে শাহাদাতের বরণ করলেন।আহতও হলেন প্রচুর।ভোর হওয়ার আগেই শাপলা চত্বর খালী হয়ে গেল।হামলার সমস্ত আলামত নিশ্চিহ্ন করা হলো।পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পড়লো নাস্তিকদের সহযোগীরা।এ হামলার নেতৃত্বে ছিলো ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।আলেম ওলামাদের রক্তে রঞ্জিত হলো ঢাকার রাজপথ।



কত শত গুলিতে হাজারো ভাই আমার আশপাশ থেকে শহিদ হয়ে গেল আর আমি বদনসিব এই কষ্টের বুঝা বহন করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদার জন্য রয়ে গেলাম,

অনেক কেঁদেছি আজও কেঁদেছি আর কাঁদব না এবার প্রতিশোধ নেয়ার পালা, এমন প্রতিশোধ নেব যে গোটা দুনিয়া তা দখতে থাকবে।আর শহিদদের আত্মাখুশিতে নেচে উঠবে







বিষয়: বিবিধ

১৩৩৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217752
০৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৫
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : ভালো লাগলো । ধন্যবাদ ।
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৫
165979
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
217755
০৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৭
মুজিব সেনা লিখেছেন : খেয়াল করেছেন আজকের আকাশটাও মেঘলা,হয়ত সেদিনের মতো বৃষ্টি নেই কিন্তু মনে করিয়ে দেয় সেদিনের কথা।
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:১৩
165981
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : মনে হয় যেন সেও শোকে মুহ্যমান।
217760
০৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৩
217816
০৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : শোকাহত। তবে গত একট বছর কেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইতে পারলো না। পাবলিক একটি কমিটি কর যেত। আনাগত সময়ের জন্য এটা খুবই জরুরী।
217823
০৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২২
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : হেফাজত কুরআন সুন্নাহর হেফাজত বাদ দিয়ে এখন নিজেদের পেটের হেফাজতে ব্যস্ত। সরকারের কাছ থেকে টাকা খেয়ে তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:১৪
165982
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : আপনি কত পেয়েছেন ভাই?
217872
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হত্যাকারিদের কোন মানচিত্র থাকেনা।
০৭ মে ২০১৪ রাত ০৮:১০
166666
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : ধন্যবাদ
217928
০৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৪৪
হতভাগা লিখেছেন : হেফাজত = পর্বতের মুষিক প্রসব

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File